২০২১ সালের আটকে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করানোর চিন্তাভাবনা করছে মন্ত্রণালয়
করোনা মহামারি দিনের পর দিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। ১৬ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চলতি বছরের বড় পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সরাসরি ক্লাসে পড়িয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে মূল্যায়নের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল, সে পরিকল্পনা থেকে আপাতত সরে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার উপায় খোঁজা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত জুন মাসে বিদ্যালয়গুলো খুলে দিয়ে সেখানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি পাঠদানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশনে বলেছেন, বিদ্যালয় খুলে দিয়ে শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া যাবে না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পিছিয়ে হলেও তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে পরীক্ষা নেয়ার। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় তবে বিকল্প কী ব্যবস্থা হতে পারে এ নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা কাজ করছেন। শিগগিরই শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে সবার সামনে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষ ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষাবোর্ড। এতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেয়া হয়। পরিকল্পনা ছিলো স্কুল খোলার পর এই সিলেবাস নিয়ে যতটুকু পাঠদান সম্ভব হবে তার ওপরই পরীক্ষা নেয়া হবে। স্কুল খোলার পর বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৩০ দিন ক্লাস নেয়া হবে। আর এ সময়ে কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের পরীক্ষার নেয়ার পরিকল্পনা সবার আগে। তবে করোনার ভয়াবহতায় সবকিছু থমকে গেছে। তিনি বলেন, প্রথমে প্ল্যান ছিলো ক্লাস নেয়া। তবে এখন বিকল্প মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা রাখা হয়েছে। অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আরও বলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা এটা নিয়ে কাজ করছেন।
আমরা খুব দ্রুত ফলাফল পাবো বলে জানান তিনি। বোর্ডের চেয়ারম্যান আরও বলেন, পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে বিষয়েও আগে থেকে কিছুটা প্রস্তুতিও রয়েছে আমাদের। তিনি বলেন, ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করে তাদের পরের ধাপে উন্নীত করা হয়েছিল। ওই সময়ের মূল্যায়ন সংক্রান্ত কমিটি এবং কাঠামো তৈরি আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই পরীক্ষার বিকল্প মূল্যায়নের চিন্তায় অ্যাসাইনমেন্টকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার ব্যবস্থা করেছি দুইটা কারণে। একদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে তার কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলের সংস্পর্শে থাকে। এটার আলোকে যাতে বৈষম্য কমিয়ে পড়াশুনার স্রোতের মধ্যে আনা যায়, সে জন্যই এই উদ্যোগ। অ্যাসাইনমেন্টের উছিলায় যদি ছেলে-মেয়েগুলো পড়াশোনার ট্র্যাকে ফিরে আসে। দ্বিতীয়ত এই অ্যাসাইনমেন্ট পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। আমরা যদি পরীক্ষা নিতে না পারি তখন অ্যাসাইনমেন্ট যদি মূল্যায়ন করি সেটার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে বড় কথা অ্যাসাইনমেন্টের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সবার সহযোগিতা নিক। পড়াশুনার মধ্যে থাকুক। এ কারণে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের পাশাপাশি চিন্তিত সরকার। যদি পরীক্ষার ব্যবস্থা না করা যায় তবে এবার কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ নিয়ে শিগগিরই শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কথা বলবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা এবং এইচএসসি পরীক্ষা ১ এপ্রিল শুরু হয়ে আসছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এবার ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসের দুটি পাবলিক পরীক্ষার একটিও নেয়া সম্ভব হয়নি। এসএসসি-এইচএসসির সিদ্ধান্ত শিগগিরই : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চলতি বছরের আটকে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানাবেন। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাব তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ঝুলে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করানোর চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবে রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন বাদ দিয়ে কেবল বহুনির্বাচনি প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিষয় ও পূর্ণমান (পরীক্ষার মোট নম্বর) কমিয়ে পরীক্ষা নেয়া। এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের দুই পত্র একীভূত করা। পাশাপাশি ২০০ নম্বরের বদলে ১০০ নম্বরে পরীক্ষা নেয়া হবে। কিন্তু উভয়ক্ষেত্রেই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। অর্থাৎ সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে এলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কেন্দ্রের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করে এই পরীক্ষা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর কোনো ধরনের পরীক্ষা নেয়া যায়নি। ওই বছর শিক্ষার্থীদের আগের রেজাল্ট মূল্যায়ন করে অটোপাসের মাধ্যমে পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল।
পাঠকের মতামত: